About সূরা নাস
সূরা নাস্ বা মানব জাতি -১১৪
৬ আয়াত, ১ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটি একটি মাদানী সূরা। পূর্বোক্ত সূরাকে যদি গলার হারের সাথে তুলনা করা হয়, তবে এই সূরাটি হবে সেই হারের লকেট। পবিত্র কোরাণ শরীফের এটিই শেষ সূরা এবং সূরাটিতে মানুষকে উপদেশ দান করা হয়েছে মানুষের প্রতি আস্থা স্থাপন না করে আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে। কারণ আল্লাহ্-ই হচ্ছেন একমাত্র রক্ষাকারী বিপদ বিপর্যয় থেকে। এই সূরাতে বিশেষ ভাবে সাবধান করা হয়েছে অন্তরের মাঝে পাপের বা মন্দের প্রলোভনের হাতছানি সম্বন্ধে। অর্থাৎ মানুষের রীপুসমূহ যা আত্মাকে বিপথে চালিত করে।
সূরা নাস্ বা মানব জাতি -১১৪
৬ আয়াত, ১ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ৬৩০৭ মানব জাতির প্রভু ও প্রতিপালকের ৬৩০৮, -
২। মানব জাতির রাজা [ এবং শাসন কর্তার ],
৩। মানব জাতির 'ইলাহের ' নিকট। ৬৩০৮
৬৩০৭। সূরা ফালাক, বাইরের পৃথিবীর বিপদ বিপর্যয় থেকে নিজেকে নিরাপদ করার জন্য আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। এই সূরাতে আভ্যন্তরীন বিপদ বিপর্যয় থেকে অর্থাৎ আত্মর বিপদ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য আল্লাহ্র নিরাপত্তা প্রার্থনা করা হয়েছে। সূরা ফালাকে জাগতিক বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনার শিক্ষা রয়েছে, সূরা নাসে পারলৌকিক বিপদ আপদ ও মুসীবত থেকে আশ্রয় প্রার্থনার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৬৩০৮। আল্লাহ্র সাথে মানুষের সম্পর্ক হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত।
১) আল্লাহ্ আমাদের প্রভু, সৃষ্টিকর্তা এবং প্রতিপালক। আল্লাহ্ মানুষকে প্রতিপালন করেন এবং অনুগ্রহ দান করেন। তিনি মানুষকে বিভিন্ন নেয়ামতে ধন্য করে থাকেন যার সাহায্যে সে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধনে সক্ষম হয় এবং মন্দ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
২) আল্লাহ্ হচ্ছেন বিশ্বভূবনের অধিপতি, সুতারাং মানুষেরও অধিপতি ও শাসক। পৃথিবীর যে কোন অধিপতি থেকে তিনি প্রচন্ড শক্তিশালী। আল্লাহ্ মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনার ক্ষমতা রাখেন -যে পথে মানুষের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। তিনি মানুষকে জীবনধারণের জন্য বিধান দান করেছেন।
৩) "মানুষের ইলাহ্ " অর্থাৎ মানুষের একমাত্র উপাস্য, পৃথিবীর কর্মজগত শেষ করে প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ্র নিকট ফিরে যেতে হবে কর্ম জীবনের জবাবদিহিতার জন্য [২ : ১৫৬ ]।
সে বিচার সভায় আল্লাহ্-ই হবেন একমাত্র বিচারক। পরলোকের জীবনে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভই হচ্ছে মানুষের ইহ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আল্লাহ্-ই মানুষের একমাত্র উপাস্য বা ইলাহ্। এ সব দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেই মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহ্র নিকট তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সর্ব নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করবে।
৪। আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার [ খান্নাসের ] অনিষ্ট থেকে, ৬৩০৯
৫। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, -
৬৩০৯। মানুষকে আল্লাহ্ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন। তার ফলে মানুষের স্বাধীনতা আছে ভালো বা মন্দকে গ্রহণ করার। এই স্বাধীনতার সুযোগ গ্রহণ করে থাকে শয়তান। সে মানুষের হৃদয়ের মাঝে আত্মগোপন করে থাকে এবং মনের ভিতর থেকে কৌশলে পরোক্ষ ভাবে প্রতারণাপূর্ণ কুমন্ত্রণা দান করে, যেনো মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করে। মানুষকে মন্দ পথে চালিত করার এই শক্তি হচ্ছে শয়তানের শক্তি অথবা মানুষ রূপে বিরাজিত শয়তান রূপ মানুষ অথবা জ্বিন যারা ভবিষ্যতের রঙ্গীন স্বপ্ন দ্বারা মানুষকে প্রতারিত করে বিপথে চালিত করে [ ৬ : ১১২ ]। এরা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় গোপনে এবং মানুষকে প্রলুব্ধ করে সরে দাঁড়ায় - এর ফলে তাদের আমন্ত্রণ মানুষের নিকট আরও মনোহর মনে হয়।
৬। জ্বিন ও মানুষ জাতির মধ্যে থেকে ৬৩১০।
৬৩১০। এই আয়াতটির দ্বারা কুমন্ত্রণার উৎপত্তি স্থলকে আরও বিশদ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কুমন্ত্রণা দাতা হতে পারে মনুষ্যরূপ শয়তান যাদের চর্মচক্ষুতে দেখা যায় অথবা অদৃশ্য অশুভ শক্তি যেমন জ্বিন যারা অন্তরের ভিতর থেকে কুমন্ত্রণা দান করে। দেখুন শেষের টিকা। আল্লাহ্ আমাদের অবগতির জন্য বলেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহ্র নিরাপত্তা প্রার্থনা করবো, পৃথিবীর কোন অশুভ শক্তি তা বাহ্যিকই হোক দৃশ্যতঃ হোক বা অদৃশ্যই হোক, আমাদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। দেখুন [ ৭৬ : ৩০ ] আয়াতের টিকা ৫৮৬১।
মন্তব্য : লাবীদ ইবন আসিম নামক এক ইহুদী তার কন্যাদের সহযোগীতায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে তাঁর একটি কেশে এগারোটি গ্রন্থি দিয়ে যাদু করেছিলো। এর প্রভাবে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর কষ্ট হচ্ছিল, তখন ১১ আয়াত বিশিষ্ট সূরা ফালাক ও সূরা নাস্ এই দুটি সূরা অবতীর্ণ হয়, প্রতিটি আয়াত আবৃত্তি করে, ফুঁক দেয়া হলে, এক একটি গ্রন্থি খুলে যায় এবং যাদুর প্রভাব বিদূরীত হয়।