About সূরা লাহাব
সূরা লাহাব বা অগ্নিশিখা - ১১১
৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। এই সূরাতে রাসুলের (সা) প্রতি যে, নিষ্ঠুর আচরণ ও নির্যাতন করা হয়েছিলো তারই প্রেক্ষিতে সাধারণ উপদেশ দেয়া হয়েছে যে অত্যাচারীর শেষ পর্যন্ত ধ্বংস অনিবার্য। যে লোক ঐশ্বরিক শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বার ক্রোধে উম্মাদ হয়। সে ক্রোধের আগুনে সে নিজেই দগ্ধ হবে। যে হাত তাঁর হয়ে কাজ করেছে তা ধ্বংস হবে এবং সে নিজেও ধ্বংস হবে। তার সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তি তাকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে না।
সূরা লাহাব বা অগ্নিশিখা - ১১১
৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও ৬২৯৪
৬২৯৪। 'আবু লাহাব' যার অর্থ 'আগুনের শিখা ' - আবু লাহাবের আসল নাম ছিলো আব্দুল উয়যা। আবু লাহাব ছিলো তার ডাক নাম। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) পিতৃব্য। এই নামটি তিনি লাভ করেন তার প্রচন্ড আগুনের মত মেজাজ ও উজ্জ্বল গাত্রবর্ণের জন্য। সে ছিলো শিশু ইসলামের এক চরম শত্রু। যখন মহানবী কোরাইশ গোত্রের সকলকে এবং তাঁর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের এক আল্লাহ্র প্রতি এবাদতের প্রতি আহ্বান করলেন, মানুষের কৃতকর্মের পরিণাম ও পাপ সম্বন্ধে সতর্ক করলেন, আবু লাহাব রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে রাসুলকে (সা) অভিসম্পাত দিলেন। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে যে, "The Causeless curse will not come." আবু লাহাবের অন্ধ আক্রোশ থেকে উচ্চারিত অভিশম্পাত বাণী কোনও দিনও সত্যে পরিণত হয় নাই। ইসলামের উদীয়মান সূর্য্য দিনে দিনে আরও ভাস্বর ও প্রখর হতে থাকলো এবং যারা ইসলামের প্রচারে প্রচন্ড শত্রুতা করেছিলো,তাদের শক্তি ও ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই বদর যুদ্ধে নিহত হয়। আবু লাহাব বদরের যুদ্ধের কিছুদিন পরে মহামারীতে ভীষণ দুরবস্থার মাঝে মারা যায়।
এই আয়াতে 'হাতের' উল্লেখ আছে। মানুষের সব কাজে হাতের প্রভাবই বেশী, তাই এখানে ব্যক্তি সত্ত্বাকে হাত বলেই ব্যক্ত করে দেয়া হয়। আবু লাহাবের মৃত্যু ছিলো অত্যন্ত করুণ। তিনি মহামারীতে আক্রান্ত হন ফলে সংক্রামণের ভয়ে তার আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে নির্জন প্রান্তরে রেখে আসে। সেখানে তিনি অসহায় ও করুণ মৃত্যু বরণ করেন। তার ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোনও কাজেই আসে নাই। ধন -সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি ছিলো আবু লাহাবের অহংকার ও গর্বের বিষয়বস্তু। ৩নং আয়াতে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে যে, পৃথিবীর জীবনের শেষ পরিণতি সম্বন্ধে।
২। তার ধন-সম্পদ, তার উপার্জন তার কোন কাজেই আসে নাই।
৩। শীঘ্রই সে লেলিহান আগুনে জ্বলতে থাকবে।
৪। তার স্ত্রী আগুনের জ্বালানী কাঠ বহন করবে ৬২৯৫,
৫। তার গলায় খেজুর পাতার আঁশের পাকানো রজ্জু থাকবে।
৬২৯৫। আবু লাহাবের ন্যায় তার স্ত্রীও রাসুলুল্লাহ্র প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ছিলো। সে এ ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করতো। সে খেজুরের পাতা দ্বারা রজ্জু পাকিয়ে তা দিয়ে খেজুর কাঁটার বান্ডিল তৈরী করে রাতের আঁধারে তা বয়ে এনে রাসুলের যাত্রা পথে বিছিয়ে রাখতো যেনো তা রাসুলকে আহত করে। জ্বালানী কাঠ বহন করা বাক্যটি প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা আবু লাহাবের স্ত্রীর চরিত্রের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা হয়েছে। সে ছিলো দুষ্টু প্রকৃতির ; মানুষের মাঝে বিবাদ বিসংবাদের সৃষ্টি করা ছিলো তার স্বাভাবিক ধর্ম। রাসুলুল্লাহ্ (স) ও তাঁর অনুসারীদের কষ্ট দেয়ার জন্য আবু লাহাব পত্নী নিন্দাকার্যের সাথেও জড়িত ছিলো যাতে বিবাদ, বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই 'ইন্ধন' বা জ্বালানী কাঠ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা ছিলো তার অন্যতম পাপ। এর দ্বারা অন্য আর এক রকমের আগুন ও অন্য আর এক রকমের দড়ি দ্বারা সে বেষ্টিত হয়েছে। আগুনটি হবে তার পরলোকের শাস্তি এবং দড়ি বা পাকানো রজ্জুটি হচ্ছে পাপের দাসত্ব করার প্রবণতা। কারণ প্রতিটি পাপ কাজই আত্মাকে হীনতা ও নীচতার ডোরে বেধে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত সে তার আত্মার স্বাধীনতা হারায় ও পাপের ক্রীতদাসে পরিণত হয়। এ ভাবেই পাপীরা তাদের শেষ পরিণতিকে নির্ধারিত করে নেয়। এটাই হচ্ছে এই সূরার নৈতিক উপদেশ।