About সুরা আল-ফীল
সূরা ফীল বা হস্তী - ১০৫
৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা, যার সময়কাল হচ্ছে শেষ নবী (সা) জন্মগ্রহণের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খৃষ্টাব্দ। ৫২৫ খৃষ্টাব্দে আবেসিনিয়ার খৃষ্টান নৃপতি ইয়েমেন জয় করেন। তাঁর গভর্নর আবরাহা ক্ষমতার দম্ভে এবং ধর্মীয় গোড়ামীতে অন্ধ হয়ে, রাসুলের (সা) জন্মের কয়েক সপ্তাহ পূর্বে কাবা শরীফ ধ্বংস করার জন্য মক্কা অভিযান করেন। তাঁর বিশাল সৈন্য বাহিনীর সাথে হাতিও ছিলো। তাই আবরাহাকে "হস্তী অধিপতি" রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই অপবিত্র মনোভাব অত্যাচার্য্য উপায়ে ধ্বংস হয়ে যায়। কাবা শরীফের সে সময়ে যারা রক্ষক ছিলেন তারা কোনও রূপ প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিরোধ করেন নাই, কারণ আবরাহার সেনা দল তাদের তুলনায় ছিলো অপ্রতিরোধ্য শক্তিশালী। অত্যাচার্য্য উপায়টি ছিলো ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষুদ্রাকায় পাখী আবরাহার সেনাদলের উপরে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে থাকলো এবং অগ্রসরমান সেনাদলকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে ফেললো।
সূরা ফীল বা হস্তী - ১০৫
৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। তুমি কি দেখ নাই ৬২৭০, তোমার প্রভু হস্তী - অধিপতিদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছিলেন? ৬২৭১
৬২৭০। 'তুমি কি দেখ নাই ' এ ভাবে আল্লাহ্ রাসুলকে (সা) সম্বোধন করেছেন। যদিও ঘটনাটি ঘটেছিলো রাসুলের জন্মের পূর্বে। এই 'দেখা ' কোন শারীরিক দেখা নয়। ঘটনার অত্যাচার্য বিবরণ শুনে হৃদয়ের মাঝে প্রত্যক্ষ করাকেই এখানে বুঝানো হয়েছে। রাসুলের জন্মের সময়ে ঘটনাটি তখনও ছিলো সদ্য সুতারাং বিবরণের খুঁটিনাটি সবই ছিলো অবিকৃত।
৬২৭১। 'হস্তী অধিপতি' দ্বারা আবরাহার সেনাবাহিনীকে বুঝানো হয়েছে। এই সেনা বাহিনীতে বহু সংখ্যক হস্তী বিদ্যমান ছিলো। এই সেনা বাহিনী দ্বারা আবরাহা মক্কা আক্রমণ করেছিলো কাবা শরীফ ধ্বংস করার জন্য। দেখুন সূরাটির ভূমিকা।
২। তিনি কি ওদের কৌশল ব্যর্থ করেন নাই ?
৩। তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাখীর ঝাঁককে প্রেরণ করেছিলেন, ৬২৭২
৬২৭২। অলৌকিক ঘটনাটি ছিলো এরূপ যে অগ্রগামী সেনা দল মক্কার সীমান্তে পৌঁছানোর পূর্বেই ছোট ছোট পাখীর ঝাঁক দিগন্ত অন্ধকার করে ফেলে। এ সব পাখীরা প্রত্যেকেই একখন্ড 'প্রস্তর কঙ্কর ' ধারণ করে ছিলো, যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে উচ্চ স্থান থেকে নিক্ষেপ করে। মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ছোট নূরী পাথরও বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় দ্রুত নীচে নেমে আসে এবং তীব্র গতির ফলে ভারী ও সুচালো অস্ত্রের ন্যায় হয়ে পড়ে এ সব প্রস্তর খন্ড, হস্তী বাহিনীকে সজোড়ে আঘাত করে। ফলে আবরাহার সমগ্র বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।
৪। যারা ওদের আঘাত করেছিলো পাথরের ন্যায় শক্ত পোড়া মাটির [ টুকরো ] দ্বারা। ৬২৭৩
৬২৭৩। 'Sijjil' এই শব্দটির জন্য দেখুন [ ১১ : ৮২ ] আয়াত ও টিকা ১৫৭৯ এবং শব্দটির আরও উল্লেখ আছে [ ১৫ : ৭৪ ] আয়াতে। শব্দটির অর্থ হচ্ছে পোড়া মাটির শক্ত পাথরের ন্যায় টুকরো।
৫। অবশেষে, তিনি তাদের [শষ্য ] খেয়ে ফেলার পরে [ ফসল ] শূন্য মাঠে ৬২৭৪, খড় এবং খড়ের গোড়ার মত করে দিলেন। ৬২৭৫
৬২৭৪। ফসলের জমি থেকে ফসল কেটে নেয়ার পরে, ফসলের গোড়া মাঠে থেকে যায়। সে সময় ফসলের মাঠকে দেখায় রিক্ত ও মৃতবৎ মনে হয়। আবরাহার সৈন্য সামন্ত সম্বন্ধে ঠিক সেই একই উপমা দেয়া হয়েছে। কঙ্করের আঘাতে বিধ্বস্ত সুবিশাল সেনা বাহিনী ছিলো মৃত এবং সেনাবাহিনী হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য। অন্য আর এক ভাবেও এর ব্যাখ্যা করা যায় যে সেনা বাহিনীকে মনে হচ্ছিল যেন 'ভক্ষিত খড় এবং গোবরের মাঝে খড়ের অংশ বিশেষ।" অবশ্য উভয় ক্ষেত্রেই অর্থ একই তবে শেষোক্ত ক্ষেত্রে অর্থটি অধিক প্রযোজ্য।
৬২৭৫। এই সূরার মাধ্যমে যে বিশ্বজনীন উপদেশ দান করা হয়েছে তা দ্বিবিধ। সমসাময়িক মোশরেক কোরাইশদের জন্য উপদেশ ছিলো যে, আল্লাহ্ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। যদি তারা রাসুলকে (সা) নির্যাতন করে,তবে মনে রাখতে হবে, কাবা ছিলো আল্লাহ্র ঘর মাত্র, কিন্তু রাসুল আল্লাহ্র প্রিয় নবী ও বন্ধু। সুতারাং কাবা শরীফের থেকে রাসুলের অস্তিত্ব ও সম্মান অনেক বেশী ও বড়। সুতারাং কোরাইশদের সকল অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে আল্লাহ্ই তাঁকে রক্ষা করবেন। এই সূরার বিশ্বজনীন উপদেশ হচ্ছে : মানুষ ক্ষমতা ও সম্পদের দ্বারা প্রমত্ত ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে ; ফলে তারা নিজেদের এতটাই শক্তিশালী মনে করে যে তারা আল্লাহ্র ক্ষমতাকে প্রতিদ্বন্দীতায় আহ্বান করার সাহস পায় এবং আল্লাহ্র বিশ্বজনীন পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা তাদেরই ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহ্র বিরুদ্ধে তারা ঝড়ের মুখে পালকের ন্যায় উড়ে যায়।