About সুরা আল-কারি'আ
সূরা কারি'আ বা মহা প্রলয় -১০১
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটি একটি মক্কী সূরা যা শেষ বিচার দিনকে মহাপ্রলয়ের দিন রূপে বর্ণনা করেছে। সেদিন মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও হতবিহ্বল হয়ে পড়বে। পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবীতে কৃত মানুষের প্রতিটি কর্ম রয়ে যাবে এবং তা ন্যায় ও অন্যায়ের বাটখাড়াতে ওজন করে তার প্রকৃত মূল্যমানের প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সূরা কারি'আ বা মহা প্রলয় -১০১
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। মহা প্রলয়ের [ দিন ] ৬২৫১।
৬২৫১। প্রচন্ড শব্দের দিন বা মহা প্রলয় বা শেষ বিচারের দিন, যেদিন এই সুশৃঙ্খল পৃথিবীর সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে এবং পৃথিবী প্রচন্ড বেগে প্রকম্পিত হবে। দেখুন [ ৯৯ : ১ ] আয়াতের টিকা ৬২৩৫ এবং [ ৮৮ : ১ ] আয়াতের টিকা ৬০৯৬। বর্তমানে আমাদের চোখে যে দৃশ্যমান পৃথিবী তার মানচিত্র মুছে যাবে। সে অভিজ্ঞতা হবে এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। কিন্তু সেটাই হবে নূতন পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা লগ্ন, যেখানে পার্থিব জীবনের প্রতিটি কর্মকে বিচার করা হবে এবং তার প্রকৃত মূল্যমানকে নির্ধারিত করা হবে।
২। মহা প্রলয়ের [ দিন ] কি ?
৩। মহা প্রলয়ের [ দিন ] সম্বন্ধে তোমাকে কি ভাবে জানানো যাবে ?
৪। এটা সেদিন, যেদিন মানুষ পতঙ্গের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হবে, ৬২৫২
৬২৫২। নূতন পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে যখন পুরাতন পৃথিবী প্রচন্ড আলোড়নে লন্ড ভন্ড হয়ে পড়বে, তখন মানুষের অসহায় অবস্থাকে এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। পতঙ্গ হচ্ছে ক্ষুদ্র,অসহায়, হালকা এক প্রাণী। প্রচন্ড বাতাসের মাঝে তাদের যেরূপ দিগভ্রান্ত, বিক্ষিপ্ত অবস্থা হয়, এই উপমার সাহায্যে কেয়ামত দিবসে মানুষের হতভম্ভ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অসহায়, অবস্থাকে সে ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ বিচার দিবসের আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়বে। পৃথিবীর স্মৃতি ক্ষীণ হয়ে আসবে, নূতন পৃথিবীর ধারণা তার মাঝে নূতন আশার জন্ম দেবে। কিন্তু নূতন পৃথিবী হবে ন্যায় ও সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত - যেখানে পৃথিবীতে কৃত কোন সৎ কাজকেই হারিয়ে যেতে দেয়া হবে না। প্রতিটি অসৎ কাজকেই তার ফল বা মূল্য শোধ করতে হবে।
৫। এবং পর্বত সমূহ পরিণত হবে ধূণিত পশমের ন্যায় ৬২৫৩
৬২৫৩। দেখুন [ ৭০ : ৯ ] আয়াতের টিকা ৫৬৮২। পর্বত হচ্ছে কাঠিন্য ও স্থায়ীত্বের প্রতীক। পৃথিবীর জীবনে পর্বতকে মনে হয় তা ধ্বংস করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু সেই মহা প্রলয়ের দিনে পর্বত শুধু ধ্বংসই হবে না, তা হবে "ধূণিত পশমের মত"। এটা একটি রূপক বর্ণনা যার সাহায্যে তুলনা করা হয়েছে পৃথিবীতে যাকে আমরা চিরস্থায়ী ও দৃঢ় ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করি, পরলোকের জীবনে, নুতন পৃথিবীতে তা বাতাসে মিলিয়ে যাবে, যার কোন অস্তিত্বই থাকবে না।
৬। তখন, [ ভালো কাজের ] পাল্লা যার ভারী হবে ৬২৫৪,
৬২৫৪। সৎ কাজ বা ভালো কাজকে সেদিন ওজন করা হবে ন্যায় ও অন্যায়ের বাটখাড়াতে এবং প্রকৃত মূল্যমান ধার্যকরা হবে। এই মূল্যায়নের সময়ে শুধুমাত্র সৎ কাজের পরিণতি ও ফলাফলই বিচার করা হবে না, বিচার করা হবে প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য বা নিয়ত। প্রকৃতপক্ষে কি উদ্দেশ্যে কাজটি করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রলোভন, প্ররোচণা, উত্তেজনা, কাজের পরিবেশ, সমসাময়িক সমাজের অবস্থান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সামাজিক সংশোধন অর্থাৎ এক কথায় খুঁটিনাটি প্রতিটি ব্যাপারেরই ভিত্তিকে প্রত্যেকের কাজকে মূল্যায়নের জন্য বিচার বিবেচনা করা হবে। ঠিক একই ভাবে মন্দ কাজকেও বিচার ও মূল্যায়ন করা হবে। এই মূল্যায়নে ভালো কাজের পাল্লা ভারী হলে তা মানুষকে সন্তোষজনক ও আনন্দদায়ক আলয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। অবশ্য এই বাসস্থান হবে নূতন পৃথিবীতে। অবশ্য যে বাটখাড়ার বা পাল্লার উল্লেখ এখানে করা হলো তা হচ্ছে রূপক অর্থে।
৭। সে তো লাভ করবে পরম সন্তোষজনক জীবন ৬২৫৫।
৬২৫৫। দেখুন [ ৯৮ : ৮ ] আয়াত ও টিকা ৬২৩৩। ভালো কাজের মূল্যায়নের পুরষ্কার অপার প্রশান্তির জীবন, অবশ্য এই প্রশান্তির গাঢ়তা বা গভীরতা সকলের জন্য সমান হবে না। তা নির্ভর করবে কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী। তবে সকল ক্ষেত্রেই তা হবে প্রশান্তি যা প্রতিটি ব্যক্তির ব্যক্তিসত্ত্বার সাথে সমন্বিত থাকবে।
৮। কিন্তু যার [ ভালো কাজের ] পাল্লা হাল্কা হবে,
৯। তার স্থান হবে হাবিয়া দোযখের [ অতল গর্ভে ]। ৬২৫৬
৬২৫৬। পূণ্যাত্মাদের প্রশান্তির যেরূপ বিভিন্ন ধাপ বা মর্যদা বিদ্যমান থাকবে, ঠিক সেরূপ বর্তমান থাকবে শাস্তির বিভিন্ন ধাপ। পাপের গুরুত্ব ও ধাপ অনুযায়ী তা নির্ধারণ করা হবে। 'হাবিয়া' হচ্ছে জাহান্নামের নিম্নস্তর।
১০। কি ভাবে তোমাকে জানানো যাবে সেটা কি ?
১১। [ উহা হল ] প্রচন্ড ভাবে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।