About সুরা আত-তারিক
সূরা তারিক বা রাতের আগুন্তক - ৮৬
১৭ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভুমিকা ও সারসংক্ষেপ : এই সূরাটিও প্রাথমিক মক্কী সূরার অর্ন্তগত। সম্ভবতঃ পূর্বের সূরা থেকে এর সময়ের পার্থক্য খুব বেশী নয়।
এর বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রতিটি আত্মার নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়। মানুষের নশ্বর দেহের মূল্য খুব বেশী নয়, কিন্তু আল্লাহ্ প্রদত্ত আত্মা হচ্ছে অক্ষয় ও অমর এবং তার জন্য আছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত -পরলোকের জীবনে।
সূরা তারিক বা রাতের আগুন্তক - ৮৬
১৭ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। শপথ আকাশের ৬০৬৭ ও রাতের [ আকাশে ] আগমনকারীর ; ৬০৬৮
৬০৬৭। এখানে আকাশের শপথের মাধ্যমে রাত্রির আকাশের নক্ষত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ আকাশ ও রাতের আকাশের নক্ষত্রের শপথের মাধ্যমে যে বক্তব্যের উপস্থাপন করেছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে ৪ নং আয়াতে। " এমন কোন প্রাণ নাই যার উপরে তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয় নাই।" পূর্বের সূরাতে উল্লেখ করা হয়েছে মোমেন বান্দাদের উপরে নির্যাতনের কথা এবং বলা হয়েছে আল্লাহ্ তাদের রক্ষা করেন। এই সূরাতেও সেই একই বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রাতের আকাশের নক্ষত্র মন্ডলী উজ্জ্বল ভাবে অন্ধকার আচ্ছন্ন পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকে। রাতের অন্ধকারের পটভূমিতে কোটি কোটি যোজন দূর থেকে বিচ্ছুরিত নক্ষত্রের আলো মানুষের মনকে কোন সূদুরের পানে নিয়ে যায়। এটি একটি রূপক বর্ণনা। ঠিক সেরূপ হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগত। মানুষের অজ্ঞতা অথবা বিপদ বিপর্যয়ে অথবা পার্থিব আকর্ষণের হেতু যখন তাদের আধ্যাত্মিক জগত অন্ধকারে ডুবে যায় তখন নক্ষত্রের আলোর ন্যায় আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের আলো সেই অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে আমাদের পথ দেখায়। সুতারাং মোমেন বান্দারা,যারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসে দৃঢ় ও অকুতভয়, তাদের পথ হারানোর কোন ভয় নাই। আল্লাহ্ তাদের রক্ষা করবেন।
৬০৬৮। এই আয়াতের উত্তর ৩নং আয়াতে দেয়া হয়েছে 'উহা উজ্জ্বল নক্ষত্র।" কোন কোন তফসীরকারের মতে এটা হবে প্রভাতের শুকতারা যা রাতের শেষ প্রহরে উজ্জ্বলরূপে প্রতিভাত হয়। আবার অন্য দল মনে করেন এটা হবে শনিগ্রহ, আবার অনেকে মনে করেন এটা লুব্ধক নক্ষত্র বা সপ্তর্ষিমন্ডল বা উল্কাপিন্ড হবে। মওলানা ইউসুফ আলী সাহেবের মতে কোন বিশেষ নক্ষত্র হিসেবে বর্ণনা না করে সাধারণভাবে নেয়া যেতে পারে যা সমগ্র নক্ষত্র মন্ডলীর জন্য প্রযোজ্য হবে। কারণ বছরের প্রতিটি রাত্রেই নক্ষত্র মন্ডলী আকাশে দ্যূতি বিকিরণ করে এবং রাতের আকাশকে আলোকিত করে।
২। তোমাকে কি ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে যে রাত্রের [ আকাশে ] আগমনকারী কি ?
৩। উহা উজ্জ্বল নক্ষত্র !
৪। এমন কোন প্রাণ [ আত্মা ] নাই যার উপরে তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয় নাই। ৬০৬৯
৬০৬৯। যদি মানুষ শুধুমাত্র বস্তু জগত সম্বন্ধে তার সমস্ত চিন্তা -ভাবনা ও সত্ত্বা ব্যপৃত না রেখে মনোজগতকে বা আধ্যাত্মিক জগতকে প্রাণিধান করার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করে, তবে তাঁর কোনও ভয় নাই। আল্লাহ্ এদের অগোচরে সকল বিপদ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবেন। হয়তো পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে, সামাজিক অবস্থানে তাঁর স্থান অতি নগণ্য ; কিন্তু তাঁর আত্মা আধ্যাত্মিক জগতের দুর্গম পথকে অতিক্রম করে আল্লাহ্র নিকট সম্মানের অধিকারী হয়ে যায়। আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহ্ তাঁকে সমগ্র সৃষ্টির উপরে সম্মান দান করেন। ঐশ্বরিক শক্তি তাঁদের সকল বিপদ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন এই পার্থিব জীবনে।
৫। সুতারাং মানুষ প্রাণীধান করুক কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৬। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত এক বিন্দু পানি থেকে ৬০৭০
৬০৭০। দেখুন সূরা [ ৭৬ : ২ ] আয়াতের টিকা ৫৮৩২।
৭। ইহা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য থেকে, ৬০৭১
৬০৭১। পুরুষের বীর্য হচ্ছে দেহের কেন্দ্রীভূত বিশুদ্ধ সারাংশ। বীর্য দেহের কটিদেশে উৎপন্ন হয়; অর্থাৎ নিতম্বের হাড় ও পঞ্জরাস্থির মধ্যবর্তী অঞ্চলে। মানুষের মেরুদন্ড হচ্ছে শক্তি ও ব্যক্তিত্বের প্রতীক। মেরুদন্ডের মধ্যে দিয়ে স্নায়ু মন্ডলীর মূল কান্ড পরিচালিত হয়েছে, যার মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্তি ঘটেছে। আর এই স্নায়ু মন্ডলীর মাধ্যমে মস্তিষ্ক তার সকল নির্দ্দেশনা দেহের সর্বত্র পরিচালনা করে।
৮। নিশ্চয়ই [আল্লাহ্ ] তাকে পুণরায় [জীবিত ] করে আনতে সক্ষম |
৯। সেদিন [ সকল ] গোপন বিষয় পরীক্ষা করা হবে।
১০। [ মানুষের ] কোন ক্ষমতা থাকবে না, এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না |
১১। শপথ [ সেই ] আকাশের [ যা ] বার বার আসে,
১২। পৃথিবীর শপথ, যা মুক্ত করে [ সবেগে নির্গত প্রস্রবণ ও অঙ্কুরিত উদ্ভিদ ]
১৩। দেখো, এই সেই বাণী [ কুর-আন ] যা পৃথক করে [ ভালোকে মন্দ থেকে ]। ৬০৭৬
১৪। এটা কোন তামাশার বিষয় নয়।
১৫। তারা তো ষড়যন্ত্রের দুরভিসন্ধি করছে,
১৬। আমিও পরিকল্পনা করছি ৬০৭৮।
৬০৭৮। দেখুন সূরা [ ৩ : ৫৪ ] আয়াত।
১৭। অতএব, অবিশ্বাসীদের জন্য বিলম্ব কর, এবং অবকাশ দাও [ কিছু কালের জন্য ]।