About সূরা আহযাব
সূরা আহ্যাব বা মিলিতশক্তি - ৩৩
৭৩ আয়াত, ৯ রুকু , মাদানী
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : ২৬ নং সূরা দিয়ে যে শ্রেণীবদ্ধ সূরাগুলির শুরু হয়েছিলো পূর্বের সূরাটি [ ৩২ নং ] ছিলো শ্রেণীর শেষ সূরা। এখন থেকে শুরু হচ্ছে জীবনের কঠিন সত্যের বর্ণনা। এখানে দুটি ধাপে তা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন-
১) শক্তি প্রয়োগ ও প্রচন্ড আক্রোশে সত্যকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা এবং
২) কুৎসা এবং অশোভন আচরণ দ্বারা নারীর চরিত্রে কালিমা লেপন।
প্রথমটিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় আহ্যাব বা মৈত্রিবদ্ধ দুষ্কার্যে সহযোগীদের সাথে। যারা মদিনার মুসলিম সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য গোপন ষড়যন্ত্রে মিলিত হয়। এরা ছিলো, পৌত্তলিক আরব , ইহুদী [ বানু নাদের গোষ্ঠি ] সম্প্রদায়, যাদের মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো তাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য, , আভ্যন্তরীণ বেদুঈন আরব গোষ্ঠি [গাতাফান গোষ্ঠি ] , এবং মদিনার ইহুদী সম্প্রদায় [ বানু কোরাইজা ]। এই সম্প্রদায় গুলির মৈত্রিবদ্ধ হওয়ার কারণ ছিলো ইসলামের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়া। যদিও তাদের সংঘবদ্ধ ক্ষমতা অবরুদ্ধ মুসলমানদের দুঃচিন্তা ও কষ্টের কারণ ছিলো , তবুও শেষ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম এই পরীক্ষায় বিজয়ীরূপে স্থান লাভ করে এবং অবস্থানকে আরও সুসংহত ও দৃঢ় করতে সমর্থ হয়।
মক্কার কোরাইশরা মুসলমানদের উপরে অত্যাচারের বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে। তারা মুসলমানদের অবরোধ, অপমান, শারীরিক অত্যাচার এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, নব্য মুসলিমদের এক অংশ আবেসিনিয়াতে হিজরত করে। মূসলমানদের এই শত্রুদের সাথে প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে বদর প্রান্তে হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে , যেখানে কোরেশদের নিশ্চিত পরাজয় ঘটে। [ দেখুন আয়াত ৩: ১৩ এবং টিকা ৩৫২ ] পরের বছর হিজরতের তৃতীয় বর্ষে তারা প্রতিশোধ নেবার জন্য মদিনাতে আক্রমণ চালায়। ওহদ্ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যদিও ওহদের যুদ্ধে মুসলমানদের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি ঘটে , তবুও শেষ পর্যন্ত মদিনা রক্ষা পায় এবং কোরাইশরা বিক্ষুব্ধ ও নিরাশা নিয়ে মক্কাতে ফিরে যায়। এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা তাদের মিত্রদের সহযোগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে এবং হিজরীর পঞ্চম বর্ষে সাওয়াল মাসে তাদের মিলিত সৈন্য সহযোগে যা প্রায় ১০,০০০ এর মত ছিলো , তারা মদিনা অবরোধ করে। শত্রুদের এই মিলিত অবরোধকেই উল্লেখ করা হয়েছে [ ৩৩ : ৯- ২৭ ] আয়াতের মাধ্যমে। এই অবরোধ দুসপ্তাহের উপরে স্থায়ী হয়। কেহ কেহ তা ২৭ দিন বলে উল্লেখ করেছেন। এই অবরোধের ফলে মূসলমানেরা ক্ষুধা ও শীতে প্রচন্ড কষ্ট পায়। উপরন্তু তাদের উপরে শত্রুপক্ষের অবিশ্রান্ত তীর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে এবং সেই সাথে তীব্রভাবে গালিগালাজ , অপমানজনক বাক্যের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। দুষ্কর্মে সহযোগী এই মৈত্রিবদ্ধ শক্তি বা আহ্যাব শেষ পর্যন্ত ছত্রভঙ্গ অবস্থায় রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে যায় এবং ইসলামের অবস্থান আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। এই মৈত্রিবদ্ধ শক্তির আক্রমণ ছিলো সুবিন্যস্ত ও সুসংগঠিত, সুপরিচালিত আক্রমণ। কিন্তু মুসলিমরা তা প্রতিহত করার জন্য ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে একটি ছিলো মদিনার চুতর্পাশ্বে পরিখা খনন [খন্দক ] করা যার নির্দ্দেশ দান করেছিলেন আল্লাহ্র রাসুল এবং কার্যে পরিণত হয় পারস্যের অধিবাসী সালমানের তত্বাবধানে। সেই কারণে এই অবরোধ এবং যুদ্ধ পরিখার যুদ্ধ নামে খ্যাত।
দ্বিতীয়ত : রসুলের [সা ] সহধর্মীনীদের সমাজে অবস্থান ও সম্মানের কথা আলোচনা করা হয়েছে এবং সেই সাথে মুসলিম নারীদের সম্পর্কে সাধারণ নীতিমালার অবতারণা করা হয়েছে যাতে তাদের সামাজিক সম্মান রক্ষা করা হয়। এবং কুৎসা ও অপমান থেকে সুরক্ষিত করা হয়। রসুলের সহধর্মীনিরা সমাজের সেবার জন্য নিবেদিত ছিলেন। তারা সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেদের আত্মনিবেদন করেছিলেন। তাঁরা মুসলমান মহিলাদের এই কাজে আত্মনিয়োগের জন্য অনুপ্রাণীত করেন। মুসলমান মহিলাদের সামাজিক কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দান করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন [দুই যয়নাব ] গরীবের সেবায় আত্ননিয়োগ করেন। সে যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের সেবা দান করা ছিলো এক জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যাপার। রসুলের কন্যা বিবি ফাতেমা গমন করেন এবং আহত পিতার সেবা শুশ্রূষা করেন।
সারসংক্ষেপ : পৌত্তলিক আরবদের বিবাহ সংক্রান্ত পুরাণ প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে। পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক হবে স্বাভাবিক সম্মানজনক। [ ৩৩ : ১ - ৮ ]।
পরিখার যুদ্ধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত উপদেশ : মোনাফেক এবং তাদের ভয়ভীতি ; সত্য এবং মহৎ উদাহরণকে অনুসরণ করতে হবে। [ ৩৩ : ৯ - ২৭ ]।
রসুলের [ সা] স্ত্রীদের জন্য আছে উচ্চ সম্মান : মিথ্যা সংকোচে অসুখী বিবাহ চিরস্থায়ী করার প্রয়োজন নাই। রসুলের [সা ] স্ত্রীদের প্রতি ব্যবহার হবে সংবেদনশীল এবং ভদ্র। [৩৩ : ২৮- ৫২ ]।
রসুল [সা ] এবং তাঁর পরিবারের সম্মান প্রাপ্য : কুৎসা রটনা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ; তোমাদের বাক্য ও দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন হও। [৩৩ : ৫৩ - ৭৩ ]।