About সূরা আনকাবুত
সূরা আনকাবুত বা মাকড়সা - ২৯
৬৯ আয়াত, ৭ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : সূরা নং ১৭ থেকে সূরার যে শ্রেণী বিভাগ শুরু হয়েছে এই সূরাটি শ্রেণীর সর্বশেষ সূরা। এই শ্রেণী বিভাগে আলোচনা করা হয়েছে প্রতিটি মানুষের আত্মিক ক্রমোন্নতিকে স্বতন্ত্রভাবে , বিশেষ ভাবে উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে মহান নবী রসুলদের, যাদের আল্লাহ্ এই বিরাট কাজের জন্য প্রস্তুত করে নেন। তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব এবং প্রত্যাদেশ ছিলো যুগোপযোগী [ দেখুন সূরা ১৭ এর ভূমিকা ]। সূরা ২৬ থেকে যে উপশ্রেণী শুরু হয়েছে এই সূরাটি সেই উপশ্রেণীরও শেষ সূরা , যেখানে ধর্মীয় ইতিহাসে আধ্যাত্মিক আলোর প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে [ দেখুন সূরা ২৬ এর ভূমিকা ]।
পূর্বের সূরাটি শেষ করা 'Ma'ad' মতবাদ বা মানুষের চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন আল্লাহ্র নিকট এই মতবাদের উল্লেখের মাধ্যমে। এই মতবাদের আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এই সূরাতে এবং পরবর্তী তিনটি সূরাতে। এই সূরাটি বর্তমান শ্রেণীভূক্ত সূরাগুলি ও পরবর্তী তিনটি সূরার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।
আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ ও অনুগ্রহ লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে চরিত্রের গুণাবলী অর্জন করা এই বিশেষ বিষয়বস্তুর উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। গুরুত্ব্ আরোপ করার জন্য পুণরায় নবীদের মধ্যে হযরত নূহ্, ইব্রাহীম এবং লূত এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাথে উল্লেখ করা হয়েছে মিদিয়ান, আ'দ, সামুদ এবং ফেরাউনের কাহিনী যারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করেছিলো। পার্থিব জীবনকে পরলোকের জীবনের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মূল সূরাটি অবর্তীর্ণ হয় হিজরতের পূর্বে মক্কাতে অবস্থানের মধ্যবর্তী সময়ে। সময়ের এই ক্রমপঞ্জি এ কারণেই উল্লেখযোগ্য যে হিজরতের বহু পূর্বেই ভবিষ্যত সংগ্রামী মুসলিম ভাতৃত্বের সম্বন্ধে বলা হয়।
সার-সংক্ষেপ : ঈমানের বা বিশ্বাসের পরীক্ষা নেয়া হয় পৃথিবীর জীবনে দুঃখ, কষ্টের সংগ্রামে, চরিত্রের গুণাবলীর মাধ্যমে। যদিও নূহ্ ৯৫০ বৎসর বেঁচে ছিলেন , কিন্তু তার সম্প্রদায় সত্যকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। হযরত ইব্রাহীমের সম্প্রদায় তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে [ ২৯ : ১-২৭ ]।
লূতের সম্প্রদায় শুধু যে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করেছিলো তাই-ই নয়, তারা লূতকে দ্বন্দে আহ্বান করেছিলো। আ'দ ও সামুদ জাতি ছিলো বুদ্ধিমান, কিন্তু তারা তাদের বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করে। কারূণ, ফেরাউন ,এবং হামান ধ্বংস হয়ে যায় তাদের দাম্ভিকতা ও উদ্ধতপনার জন্য। শেষ পর্যন্ত তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পার্থিব জীবনের ক্ষমতা খুবই ভঙ্গুর , ঠিক যেনো মাকড়সার জাল [ ২৯: ২৮ -৪৪ ]।
কোরাণ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। কোরাণ আমাদের শিক্ষা দেয় পাপ ও পূণ্যের মধ্যে পার্থক্য এবং পরলোকের উৎকর্ষ লাভের জন্য গুরুত্ব আরোপ করে [ ২৯ : ৪৫ - ৬৯ ]