About সূরা ত্বোয়া-হা
সূরা তা - হা বা সাংকেতিক অক্ষর - ২০
১৩৫ আয়াত, ৮ রুকু, মক্কী
[ দয়াময় পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
এই সূরার অবতীর্ণের সময়কাল , ধর্মীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সেই সূরা যা শ্রবণে হযরত ওমর, হত্যাকারী থেকে মোমেন বান্দাতে পরিণত হন, এই ঘটনা ঘটে হিজরতের সাত বৎসর পূর্বে।
ইব্নে হিসান সম্পূর্ণ ঘটনাটির খুঁটিনাটি বর্ণনা করেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওমর ছিলেন ইসলামের অন্যতম প্রধান নির্যাতনকারী শত্রু। তিনিও অন্যান্য কোরেশদের মত সর্বদা ষড়যন্ত্র করতেন যে কিভাবে রসুলের (সা) জীবন বিনাশ করা যায়। এরকম সময়ে তাঁকে সংবাদ দান করা হয় যে, তার বোন ফাতেমা ও ভগ্নীপতি সা'দ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। যেহেতু সে সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের উপরে অত্যাচার করা হতো সেহেতু তারা সযত্নে তাদের বিশ্বাসকে গোপন রেখেছিলেন। খবর শুনে ওমর রাগে অন্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁদের বাড়ীতে গমন করেন, সে সময়ে তাঁরা তাঁদের কাছে লিখিত এই সূরার অনুলিপি পাঠ করছিলেন। ওমর তাঁর বোন ও ভগ্নীপতিকে আক্রমণ করেন। কিন্তু তাঁরা সেসময়ে প্রচন্ড ধৈর্য্যের পরিচয় দেন, কিন্তু দৃঢ়তার সাথে তাদের ঈমানের সত্যতা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। ওমর তাদের বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতা ও ধৈর্য দেখে এতটাই বিমুগ্ধ হয়ে যান যে, তিনি তাঁদের কোরাণের অংশটি যা তারা পড়ছিলেন তা দেখাতে বলেন। তাঁকে তা দেয়া হয় এবং তিনি তা পাঠ করেন। এই সূরা পাঠে তার হৃদয় এতটাই অভিভূত হয়ে যায় যে, তিনি তৎক্ষণাত ইসলাম গ্রহণ করেন, শুধু তাই - ই নয়, তিনি হলেন ইসলামের এক শক্ত মজবুত স্তম্ভের মত একজন দৃঢ় সমর্থক।
হযরত সা'দের কাছে সূরার কয়েকটি পাতা ছিলো মাত্র ; সম্ভবতঃ তা ছিলো প্রথম দিকের। এই সূরার প্রারম্ভে " তা - হা" এই দুটি বর্ণমালা মুদ্রিত করা হয়েছে। এই বর্ণমালা দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে ? প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে এরূপ বর্ণমালা সন্নিবেশ দ্বারা ভাবগত অব্যয়কে বোঝানো হয়েছে যার অর্থ , " হে মানবকূল!" এই সূরাকে পূর্বের সূরার ধারাবাহিকতা বলা যায়। এখানে হযরত মুসার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্র নিকট থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পরে যে সঙ্কট তিনি অতিক্রম করেন, তাঁর মায়ের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কিভাবে তিনি ফেরাউনের নিকটে নীত হন, কিভাবে তিনি সেখানে মিশর বাসীদের সর্বোচ্চ জ্ঞান বিজ্ঞান শেখার সুযোগ লাভ করেন যা পরবর্তীতে তিনি আল্লাহ্র সেবায় নিয়োজিত করেন। তাঁর পালিত পিতা [ ২৮ : ৯ ] ফেরাউনের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে এই সূরার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মুসার কাহিনীর মধ্যে বর্ণনা আছে কিভাবে বিপথগামী এক ব্যক্তি ইসরাঈলীদের মূর্তি পূঁজাতে অনুপ্রাণীত করে, এ ভাবেই চিরশত্রু শয়তান মানুষের পতন ঘটায়। আল্লাহ্র স্তুতি ও আল্লাহ্র নিকট একান্ত প্রার্থনা আধ্যাত্মিক অন্ধত্বের অবসান ঘটায়, আর এ ভাবেই আত্মাকে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ গ্রহণের যোগ্য করে তোলে।
সারসংক্ষেপ : আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ [ কোরাণ ] কোন দুঃখ দুর্দ্দশার কারণ নয় বরং তা হচ্ছে পরম করুণাময়ের করুণার উপহার। [ ২০ : ১ - ৮ ]।
আল্লাহ্ কিভাবে হযরত মুসাকে নির্বাচিত করেন এবং তাঁর ভাই হারূণ সহ হযরত মুসাকে ফেরাউনের নিকট পাঠান। [ ২০ : ৯ - ৩৬ ]।
হযরত মুসার মাতাকে আল্লাহ্ নির্দ্দেশ দান করেন শিশু মুসাকে নদীতে নিক্ষেপ করার জন্য। শিশু মুসা আল্লাহ্র তত্বাবধানে ফেরাউনের প্রাসাদে লালিত পালিত হতে থাকেন , যেনো ভবিষ্যতে মুসা ফেরাউনকে আল্লাহ্র পথে আহ্বান করতে পারেন। [ ২০ : ৩৭ - ৭৬ ]
আল্লাহ্ মুসাকে শিক্ষা দেন তাঁর লোকজনদের পরিচালনা করার জন্য এবং তাদের বিদ্রোহী মনোভাবকে দমন করার জন্য। বর্ণনা আছে কি ভাবে সামীরি ইসরাঈলীদের উত্তেজিত করে। [ ২০ : ৭৭ - ১০৪ ]
শেষ বিচারের দিনে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বই হবে একমাত্র বিচারের বিষয় এবং সকলেই প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করবে। মানব সন্তান সর্বদা আদমের শত্রু শয়তানের থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। তাঁরা অহংকার পরিত্যাগ করবে এবং আল্লাহ্র প্রশংসা ও প্রার্থনার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে। সেদিনের ডাকের জন্য প্রত্যেকে অপেক্ষা করবে [ ২০: ১০৫ - ১৩৫]