About সূরা কাহফ
সূরা কাহ্ফ - ১৮
১১০ আয়াত, ১২ রুকু, মক্কী,
[দয়াময় পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : সূরা xvii এর ভূমিকাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, কি ভাবে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব কর্মের দ্বারা, চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে। আত্মিক উন্নতির ধর্মীয় ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এবং তা সাধারণ বর্ণনার আওতায় আনা হয়েছে।
জীবন ক্ষণস্থায়ী ও রহস্যপূর্ণ, এই পাঠ এই বিশেষ মক্কী সূরাতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে গুহা সঙ্গীদের কথা, যারা গুহার অভ্যন্তরে বহু বছর নিদ্রিত ছিলেন। কিন্তু তাদের ধারণা ছিলো তারা স্বল্প সময়ই সেখানে ছিলেন। তারপরে বর্ণনা করা হয়েছে হযরত মুসার রহস্যময় শিক্ষকের কথা। যিনি মুসাকে শিক্ষা দেন যে মানুষের জীবন এক রূপক কাহিনী। আরও আছে দুই শিং বিশিষ্ট জুলকারনাইনের কাহিনী। যিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিপতি ছিলেন, এবং অত্যাচারীদের থেকে দুর্বলকে রক্ষা করার জন্য লোহার দেয়াল তৈরী করেন। ক্ষণস্থায়ী, অনিশ্চিত , গৌরবান্বিত জীবনকে রূপক কাহিণীর মাধ্যমে এই সূরাতে প্রকাশ করা হয়েছে। জীবনের অনেক কিছুই আপতঃদৃষ্টিতে সত্য বিরোধী মনে হলেও সত্যবিরোধী নয়। জীবনের প্রকৃত অর্থ তখনই ভাস্বর হবে, যখন ধৈর্য্য ও জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে। পাপের আক্রমণ থেকে আত্মিক জীবনকে রক্ষা করতে হবে।
সার সংক্ষেপঃ কোরাণ হচ্ছে পথনির্দ্দেশ ও সর্তকবাণী। জীবন ক্ষণস্থায়ী ও ভাগ্যের উত্থান পতনের দ্বারা পরিবর্তনশীল। আমাদের সময়ের ধারণা ত্রুটিপূর্ণ; গুহা সঙ্গীদের গল্পের মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। গুহা সঙ্গীরা ছিলেন বিশ্বাসী, সত্যের পূজারী, ধৈর্য্যশীল এবং আরও অন্যান্য গুণে সমৃদ্ধ। কিন্তু তাদের জীবন ছিলো রহস্যে আবৃত যার গভীরতা খুব অল্প সংখ্যক লোকই নির্ণয় করতে পারে [১৮: ১-২২]
সকল জ্ঞানের উৎস এক আল্লাহ্। মিথ্যা অনুমান ও এর উপরে ভিত্তি করে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া থেকে বিরত থাক। কোরাণ থেকে শিক্ষা নাও যে, পার্থিব বিষয়ে অহংকারে স্ফীত ব্যক্তির সব কিছুই বৃথা [১৮:২৩-৪৪]
জীবন অনিশ্চিত ও পরিবর্তনশীল। ধার্মিকতা ও গুণাবলী হচ্ছে চরিত্রের স্থায়ী বস্তু। শেষ বিচারের দিন অবশ্যই আসবে, যেদিন আল্লাহ্র করুণা ও ক্রোধের প্রকাশ ঘটবে। [১৮:৪৫-৫৯]
হযরত মুসা তাঁর জ্ঞানের পিপাসায় নিজের সীমানা ভুলে গিয়েছিলো। তাঁর উপরে ধৈর্য্য ও বিশ্বাসের আদেশ দেয়া হয়। তাঁর কাছে যখন জীবনের আপতঃদৃষ্টিতে সত্যবিরোধী , কিন্তু সত্যবিরোধী নয় এ দিকগুলি তুলে ধরা হয়, তিনি তা বুঝতে পারেন। [১৮:৬০-৮২]
জুলকারনাইনের ছিলো বিশাল সাম্রাজ্য। তিনি দোষীকে শাস্তি দিতেন ও ভালোকে পুরস্কৃত করতেন। তিনি দুর্বলকে অত্যাচারী থেকে রক্ষা করতেন। তাঁর ছিলো আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস;এবং আল্লাহ্ তাঁকে পথ নির্দ্দেশ দিতেন। আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় এবং তাঁর জন্য কাজ করাই হচ্ছে পূণ্য। [১৮: ৮৩-১১০]
আবূ দার্দা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের(ফিৎনা) থেকে পরিএাণ পাবে।’’ অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। (মুসলিম ৮০৯)