About সূরা রা’দ
সূরা রাদ অথবা বজ্র - ১৩
৪৩ আয়াত, ৬ রুকু, মাদানী
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকাঃ সূরা ১০ - ১৫ পর্যন্ত সূরাগুলিকে একই গোত্রভুক্ত করার কারণ সূরা ১০ এর ভূমিকাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এই সূরাতে যে বিশেষ যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ সমূহের প্রতি ইঙ্গিত; যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা সমূহকে প্রকাশ করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর করুণার অভিব্যক্তি রয়েছে এই সূরাতে। পয়গম্বরদের মাধ্যমে আল্লাহ্র নির্দ্দেশ সমূহ মানুষের ভাষাতে রূপান্তরিত হয়। যা পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষাতে রূপান্তরিত হয় । আল্লাহ্র বাণী যেমন মানুষের ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায়, আমরা যদি বিশ্ব প্রকৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করি, সেখানেও দৃষ্টিগোচর হবে প্রকৃতির বিভিন্ন আইন সমূহ যা আল্লাহ্র আইনেরই প্রকাশ মাত্র। পৃথিবীর জীবনে প্রতিনিয়ত নূতন জীবন সৃষ্টি ও মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে এই সত্যই প্রতিভাত হয় যে মৃত্যুই শেষ কথা নয় । তবে কেন সাধারণ মানুষ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে অবিশ্বাস করে? তারা পরকালের শাস্তির কথাকে উপহাসের বিষয় বস্তুতে পরিণত করে - কারণ পরকালের শাস্তি তাৎক্ষণিক নয়। কিন্তু তারা এত নির্বোধ কেন? তারা কি বজ্র, বিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্য অনুধাবন করে না?
গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলেই অনুধাবন করা যায় যে, বিশ্বপ্রকৃতি, আকাশ, বাতাস, সকলেই তাঁরই মাহাত্য ঘোষণা করছে। সর্বসৃষ্টির মাঝে তাঁর হাতের পরশ বিদ্যমান। যা সত্য, যা সুন্দর সব তাঁর অস্তিত্ব ঘোষণা করে। পৃথিবীতে একমাত্র সত্য, সুন্দর ও ভালো চিরকালের জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে, যা অসুন্দর, মন্দ তা সময়ের আবর্তনে ধবংস প্রাপ্ত হয় - যেমন ভাবে বুদ্বুদ বাতাসে মিশে যায় । আল্লাহ্ হচ্ছেন সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। বিস্ময়কর বা অলৌকিক কিছুর মধ্যে আল্লাহ্কে অনুসন্ধান না করে আমাদের চারিপাশের প্রকৃতির মাঝে, তাঁর সৃষ্টির মাঝে, চেনা পৃথিবীর মাঝে, আল্লাহ্র সৃষ্টি নৈপুণ্যের মাঝে তাঁর ক্ষমতা ও দয়াকে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে। প্রকৃতির আইনের মাঝে তাঁর ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। মানুষ তার পরিকল্পনা করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র পরিকল্পনা বা ইচ্ছাই স্থায়ীত্ব লাভ করবে। পূর্বের সূরা ইউসুফের কাহিনীতে আল্লাহ্ এই সত্যকেই প্রকাশ করেছেন।
সার সংক্ষেপঃ আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ সত্য এবং বিশ্ব প্রকৃতির মাধ্যমে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ প্রদর্শিত হয়। আল্লাহ্ , যিনি শক্তিশালী প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের স্রষ্টা, তিনি ক্ষমতা রাখেন মৃত্যুর পরে পুণর্জীবিত করার । আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সকল কিছুর মধ্যে বিদ্যমান । তাঁর ক্ষমতা , কল্যাণ আমাদের সর্বদা ঘিরে থাকে [১৩:১ -১৮]
পূণ্যাত্মাদের সব কাজ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়, ফলে তাঁরা আত্মার মাঝে প্রশান্তি লাভ করে। যারা মন্দ তারা আল্লাহ্র বিধান বা আইন অমান্য করে, ফলে তারা তুচ্ছ ব্যাপারে বিবাদ বিসংবাদে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করে। সময়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় এদের উপরেই আল্লাহ্র অভিসম্পাত বর্ষিত হয় । [১৩: ১৯ - ৩১]
ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটে পূর্ববর্তী নবীদের জীবনে; তাদের যারা প্রথমে উপহাস করতো, পরবর্তীতে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। অপর পক্ষে ধার্মিক ও পূণ্যাত্মারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে । [ ১৩: ৩২: ৪৩]