About সূরা ইউনুস
সূরা ইউনুস বা জোনাহ্ (Jonah)- ১০
১০৯ আয়াত, ১১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : এই সূরাটি এবং পরবর্তী পাঁচটি সূরা [সূরা ১১, ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫] পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এই সূরাগুলি মক্কার শেষের দিকে অবতীর্ণ হয়; যখন মক্কা থেকে মদিনাতে হিজরতের সময়কাল প্রায় নিকটবর্তী। অবশ্য হিজরতের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই।
এই ছয়টি সূরার বিষয়বস্তুর মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান। সূরা ৮ এবং ৯-এ প্রধানতঃ নূতন মুসলমান সম্প্রাদায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নূতন মুসলমান সম্প্রদায়ের অভ্যুত্থান, সংগঠন, আদর্শ এবং সর্বপরি এর প্রচার এবং প্রসার সমসাময়িক আরব মোশরেকদের ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে। তারা ইসলামকে সমূলে বিনাশ সাধন করতে তৎপর হয়ে ওঠে। সূরাগুলির ভূমিকাতে দেখুন। এই সূরাগুলির বিষয়বস্তু হচ্ছে, বহিঃ শত্রুতাকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে, আল্লাহর সাথে পৃথিবীর মানব সম্প্রদায়ের সম্পর্কের ভিত্তি। কিভাবে প্রত্যাদেশ কাজ করে? আল্লাহর করুণার অর্থ কি? এবং এই করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অর্থই বা কি?
আল্লাহ্র রসুলরা কিভাবে তাদের প্রতি অর্পিত আল্লাহর প্রত্যাদেশ প্রচারিত করেন। মানব সম্প্রদায় কিভাবে তা গ্রহণ করবে? ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে সূরাগুলিতে। ১৩ নম্বর সূরাটি ব্যতীত অন্যান্য সব সূরারই প্রথমে "আলিফ", "লাম", "রা" এই তিনটি সংক্ষিপ্ত অক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছে, যা প্রতীকধর্মী। ১৩ নম্বর সূরাটির উপরে "আলিফ", "লাম" "মিম", "রা' এই চারটি সংক্ষিপ্ত অক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছে। এই সূরাটির এই বিভিন্নতা আমরা ১৩ নম্বর সূরার সময়ে আলোচনা করবো।
এই ভূমিকাতে শুধুমাত্র ১০ নম্বর সূরাটি সম্বন্ধেই আলোচনা করা হবে। এই সূরাটির মর্মবাণী হচ্ছে : আল্লাহ এই বিশাল বিশ্বভূবন সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র আমাদের ভোগ বিলাসের জন্য নয়, শুধুমাত্র সৃষ্টি ও ধ্বংসের জন্য নয়। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি শুধুমাত্র বস্তুগত সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর উদ্দেশ্য বহু উর্দ্ধে, মহত্বর কারণের জন্য। সবচেয়ে অত্যাচার্য হচ্ছে আল্লাহ্কে আমরা আমাদের চর্মচক্ষে দেখতে পাই না, কিন্তু তাঁকে আমরা আমাদের আত্মার মধ্যে অনুভব করতে পারি। যুগে যুগে নবী রসুলের মাধ্যমে, কিতাবের মাধ্যমে তাঁর প্রত্যাদেশ আমাদের নিকট প্রকাশিত হয়। এই সূরাতে বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে রসুলেরা প্রত্যাখাত হয়েছেন যুগে যুগে এবং কিভাবে সাধারণ মানুষ আল্লাহর প্রত্যাদেশকে অবিশ্বাস করেছে এবং শেষ মূহুর্তে অনুতাপের মাধ্যমে ফিরে এসেছে। এই সূরাতে বর্ণনা করা হয়েছে, ইউনুস নবীর ক'থা এবং তার সময়ের লোকদের কথা। এই সব লোকেরা আল্লাহর প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করেছিলো। কিন্তু যে মূহুর্তে তারা অনুতাপ করেছে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয় নাই। আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা আমাদের ধারণার অতীত যা আমাদের বিধৌত করতে সর্বদা উদগ্রীব।
সারসংক্ষেপ : বিশ্ব-বিধাতা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মানব কূলের হৃদয়ে অপূর্ব অত্যাচার্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আল্লাহর প্রত্যাদেশ ব্যতীতও তাঁর হাতের পরশ সমস্ত সৃষ্টিতে বিদ্যমান। চন্দ্র, সূর্য, তরু-লতা, আকাশ-বাতাস, দিন-রাত্রি, প্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন [১০:১-২০]
জীবনের সকল সৌন্দর্য্য এবং ভালো সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু বিশ্ব বিধাতা আল্লাহ। মানুষ অন্ধ, তাই এসব দেখেও সে আল্লাহ্র অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে না [১০:২১-৪০]।
সব কিছুর শুরু আল্লাহ্, এবং তাঁর কাছেই সব কিছু প্রত্যার্পন করবে। তাঁর কাছেই সব কিছুর শেষ। তিনিই একমাত্র সত্য। মানুষ আল্লাহর প্রেরিত সত্যকে গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর সাথে শরীক গ্রহণ করে যা সত্য বিমূখ- কারণ মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। [১০:৪১-৭০]
আল্লাহ্ নূহ্ নবীকে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে তাঁর অস্তিত্বকে প্রকাশ করেন, কিন্তু নূহ্ নবীর সমসাময়িক লোকেরা তা প্রত্যাখান করে, পরিণামে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ্ হযরত মুসার (আ) মাধ্যমে ফেরাউনের সাথে কথা বলেন। কিন্তু ফেরাউন তা বিশ্বাস করে না, কারণ সে ছিল অবাধ্য ও একগুয়ে। শেষ মহুর্তে ফেরাউন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলো কিন্তু তখন অনুতাপের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল [১০:৭১-৯২]।
আল্লাহ্র প্রতি অবিশ্বাস মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। ইউনুস নবীর সমসাময়িক জনগণ অনুতপ্ত হয়েছিলো। ফলে তারা আল্লাহ্র রহমত ও করণীয় ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। ঠিক সেইভাবে যারা বিশ্বাসী বা ঈমানদার ব্যক্তি, আল্লাহ তাঁদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করবেন। যখনই আল্লাহর সত্য (প্রত্যাদেশ) প্রকাশিত হয় যা অনুসরণ করা এবং বিপদে ও দুর্যোগে ধৈর্য্য ধারণ করা কর্তব্য। কারণ আল্লাহ্ সুক্ষ বিচারক [১০:৯৩-১০৯]