About সূরা আল ইমরান
সূরা আল-ইমরান বা ইমরানের পরিবার - ৩
আয়াত ২০০, রুকু ২০, মাদানী
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে]
ভূমিকাঃ এই সূরাটি বাকারার সমগোত্রীয়। কিন্তু এখানে বিষয়বস্তুকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সুরাতে বদরের যুদ্ধ, রমজান মাস এবং ২য় হিজরী ও ওহুদের যুদ্ধ সওয়ালের মাস ৩য় হিজরী যুদ্ধের যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে ঐসব অনুচ্ছেদের নাজিল হওয়ার সময় সম্পর্কে জ্ঞান দান করে।
সূরা বাকারার মত এই সূরাতে সাধারণভাবে মানব জাতির ধর্মীয় ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে, তবে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে কিতাবী জাতিসমূহের উপর। এই আলোচনার ধারাবাহিকতায় বর্ণনা করা হয়েছে নূতন মুসলিম উম্মতের আবির্ভাব, তাদের ধর্মানুষ্ঠান, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি। সেই সাথে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সত্যর জন্য, ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করার উপরে; এবং উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বিশ্বাসীদের, তারা যেন সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে পথ নির্দেশের জন্য প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর মঙ্গল ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করে।
এই সূরাতে নতুন যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তা হচ্ছে; (১) খৃষ্টানদের নূতন ধর্ম গ্রহণের প্রতি আহবান করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সূরাতে ইহুদীদের বিশেষভাবে সম্বোধন করা হয়েছিল, এ সুরাতে খৃষ্টানদের সেরূপ নূতন ধর্মের দিকে বিশেষভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। (২) মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য বদর এবং ওহুদের যুদ্ধ এক বিশেষ শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত; এবং (৩) জাতি হিসেবে মুসলমানদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে নির্দেশ দান করা হয়েছে এবং এই দায়িত্ব ও কর্তব্য তাদের সম্প্রদায়ের জন্য যেমন প্রযোজ্য, ঠিক সমভাবে প্রযোজ্য বহির্বিশ্বের আদান-প্রদান এবং অন্যান্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
সার-সংক্ষেপ : আল্লাহ তাঁর প্রত্যাদেশের মাধ্যমে, পূর্ববর্তী প্রত্যাদেশ সমূহের সত্যায়ন (Confirmation) করেছেন। আমরা এই পত্যাদেশ ভক্তি সহকারে গ্রহণ করবো। এই গ্রহণ করার অর্থ, এর বক্তব্য অনুধাবন করতে চেষ্টা করবো, এবং যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের ভাবধারা বা আদর্শ প্রত্যাখ্যান করবো। [৩:১-২০]
পূর্ববর্তী কিতাবধারীরা সম্পূর্ণ কিতাব প্রাপ্ত হয় নাই, তাঁরা অসম্পূর্ণ কিতাবপ্রাপ্ত জাতি। কিন্তু তারা যদি আল্লাহর এই সম্পূর্ণ প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করে তবে বিশ্বাসীরা তাদের সঙ্গ পরিহার করবে। তাদের সময় শেষ। [৩:২১-৩০]
ইমরান [মেরীর পিতা] পরিবারের কাহিনী থেকে আমরা অবগত হই হযরত মুসার প্রতি প্রেরিত বিধি-বিধান, হযরত ঈসার জন্মের অলৌকিক রহস্য এবং তাঁর কার্যকাল [৩:৩১-৬৩]।
পৃথিবীতে আল্লাহর প্রত্যাদেশ প্রেরিত হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। সারা পৃথিবীর মানব জাতিকে এর ছায়াতলে আহবান করা হয়েছে। এই ধারাবাহিক প্রত্যাদেশ ইসলামে এসে সমাপ্তি লাভ করে। মুসলমানদের উপরে নির্দেশ হচ্ছে, ঐক্য এবং শৃঙ্খলার সাথে বসবাস করা, তা হলেই মুসলমানদের জন্য রয়েছে শত্রু পথের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার অঙ্গীকার। তাদেরকে পরস্পরের জন্য বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করতে বলা হয়েছে [৩:৬৪-১২০]।
বদরের যুদ্ধে আল্লাহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কিভাবে তিনি সৎ গুণ সম্পন্ন (Virtuous) ব্যক্তিদের পক্ষ অবলম্বন করেন। ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং শৃঙ্খলা সাফল্যের চাবিকাঠি। অপর পক্ষে ওহুদের যুদ্ধের শিক্ষা হচ্ছে হতাশ না হওয়া, নৈতিক গুণের চর্চা করা এবং মৃত্যু ও কষ্টকে অবজ্ঞা করা। [৩ : ১২১-১৪৮]
ওহুদের যুদ্ধের বিপর্যয়ের কারণ হলো কিছু লোকের উচ্ছৃঙ্খলতা, আবার কিছু লোকের স্বার্থপরতা ও সিদ্ধান্তের অভাব; আবার মুনাফিকদের কাপুরুষতা। কিন্তু কোন শত্রুই আল্লাহর পরিকল্পনাকে রুদ্ধ করতে পারে না। [৩ : ১৪৯-১৮০]
শত্রুদের উপহাসকে অবজ্ঞা কর। আল্লাহর এবাদত করতে হবে ঐকান্তিক আন্তরিকতা নিয়ে। তাঁর অনুগত বান্দাদের সাফল্য এবং সমৃদ্ধি দান করার তিনিই একমাত্র নিয়ামক শক্তি। [৩:১৮১-২০০]