About বৌদ্ধ ভিক্ষু বিধি ( Buddhist Monastic Code )
Buddhist Monastic Code Volume 1-2
(3rd Revised Edition, 2013)
by Thanissaro Bhikkhu (Geoffrey DeGraff)
Translated by GanSanto Bhikkhu
অনুবাদকের কথা:
লক্ষীছড়ির পোস্ট অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে পাঠানো হলো। এই পোস্ট অফিসের কাজকারবার নিয়ে আমার বরাবরই সন্দেহ হয়। তাদের যে বেহাল দশা, চিঠিটা ঠিকঠাক পৌঁছে দেবে তো! আমরা ভেবেছি, চিঠির উত্তর পেতে কয়েক মাস বা বছরও লাগতে পারে, আর অনুবাদের অনুমতি দিলেও যদি কোনো শর্ত জুড়ে দেন ঠানিস্সারো ভান্তে, তাহলেই সেরেছে! কিন্তু আমরা সাহস করে চিঠিটি পাঠালাম। মাস দুয়েকের মধ্যেই আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ঠানিস্সারো ভান্তের কাছ থেকে একটা প্যাকেট এলো রাজবনবিহারে। সেখানে শ্রদ্ধেয় জ্ঞানলোক ভান্তে দুরুদুরু বুকে প্যাকেট খুললেন, দেখলেন একগাদা ইংরেজি বই, আর সাথে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে দুইতিন লাইনের সংক্ষিপ্ত একটা চিঠি। আমার তখন খুশিতে লাফানো বাকি! (আমি ঠিক নিশ্চিত নই ভিক্ষুরা খুশি হলে লাফাতে পারে কিনা, তাই কোনোমতে সংযত হলাম আর কি!)
সবচেয়ে খুশি হলাম ঠানিস্সারো ভান্তে সম্প্রতি আমেরিকায় প্রকাশিত BMC1 এবং BMC2 বই দুটোর সংশোধিত তৃতীয় সংস্করণের দুটো সেট আমাদেরকে পাঠিয়েছেন, এবং অনুমতি মিলেছে নিঃশর্তে, নো স্ট্রিং এটাচ্ড্। ইয়াহু!
এই দুটো খণ্ডের অনুবাদ শুরু করেছিলাম ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, মহালছড়ির করল্যাছড়িতে অবস্থিত সারনাথ বনবিহার থেকে। ফেব্রুয়ারিতে গেলাম লক্ষীছড়ির কুশীনগর বনবিহারে। সেখান থেকেই আমরা আমেরিকায় ঠানিস্সারো ভান্তেকে চিঠি লিখেছিলাম। সেখানে তিন মাসের মতো কাটিয়ে এপ্রিলের শেষের দিকে গেলাম জুরাছড়ির আমতলী ধর্মোদয় বনবিহারে। সেখানে বর্ষাবাস কাটিয়ে নভেম্বরে গেলাম বান্দরবানের বনবিহারে। এভাবে অনেক বিহার ঘুরে ঘুরে অবশেষে বান্দরবানে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে অনুবাদের কাজ সমাপ্ত করা গেল।
মূল বইয়ে ঠানিস্সারো ভান্তের ইংরেজি বাক্যগুলো খুব লম্বা লম্বা। সেখানে আছে কমা, সেমিকোলন, কয়েক ধরনের ড্যাশ, (সেই ড্যাশগুলোর কি বাহার!) আরও নানা ধরনের চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করা কথাবার্তা। এমনও আছে, একটা বাক্যতেই একটা বড়সড় প্যারাগ্রাফ হয়ে গেছে। এমনও হয়েছে, পড়তে পড়তে কথার মাঝখানে পৌঁছে ভুলে গেছি প্রথমে কী বলেছে। সেগুলোর জট ছাড়িয়ে সোজা বাংলায় লেখাটা আমার কাছে বড়ই দুষ্কর কাজ মনে হয়েছে, মাঝে মাঝে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়েছে। (ভাগ্য ভালো, আমি ন্যাড়া মাথার ভিক্ষু, নাহলে কী যে হতো ভেবে পাই না!) তবে আমি প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করেছি বাক্যটা কী বলতে চাচ্ছে। এরপর ভেবেছি সেটাকে ভেঙে বর্তমানে প্রচলিত সহজ বাংলায় বললে কীভাবে বলা হতো। এরপর ভেবেছি, সহজ ভাষায় লিখতে গিয়ে অর্থের বিকৃতি ঘটছে কিনা, সেটাতে ভুল বুঝার অবকাশ রয়েছে কিনা, (কারো পাকা ধানে মই দিচ্ছি কিনা)। চেষ্টা করেছি সহজ ভাষায় লেখার জন্য। মাসের পর মাস লিখে গেছি। সবসময় মাথার প্রসেসর ভালোমতো লজিক মেনে কাজ করেছে এমন নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না। তাই ভুলভ্রান্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি কোনো ভুলভ্রান্তি ধরা পড়লে নালাগিরি হাতির মতো দয়া নেই, ক্ষমা নেই এমন হবেন না। এই বেচারা অনুবাদকের প্রতি করুণাপরবশ হয়ে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন (এবং যদি আরেকটু দয়া হয় তো ভুলটা একটু দেখিয়ে দিয়ে যাবেন)।
জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু
করুণাপুর বন বিহার, বালাঘাটা, বান্দরবান
১৫ অক্টোবর, ২০১৫